কাপাসিয়ায় বিনামূল্যের বিদ্যুতে চাঁদাবাজির কোটি কোটি টাকা কার পকেটে?
রুবেল সরকার : দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বিদ্যুৎ খুবই গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। তাই শত ভাগ বিদ্যুতায়নের লক্ষ্যে জনগণের করের টাকায় কাজ করছে সরকার।
বিদ্যু সংযোগ সহজে ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন হবে, এমনটাই সবার প্রত্যাশা। কিন্তু বাস্তবায়নকারী বিদ্যুৎ বিভাগের অসৎ লোকদের যোগসাজশে জনগণকে বাধ্য করে বাড়তি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সংঘবদ্ধ চক্র।
মে মাসে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় এমনই একটি চিঠি প্রথমে ফেসবুকে ভাইরাল হয়। পরে ক্ষমতাসীন দলের সংবাদ সম্মেলনের প্রেক্ষিতে তা সংবাদমাধ্যমে স্থান পায়।
ইতিমধ্যে অবসরে যাওয়া গাজীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২-এর জেনারেল ম্যানেজার হাসান শাহ নেওয়াজের স্বাক্ষর ব্যবহার করে চিঠিতে বলা হয়েছে, তার দায়িত্বকালীন সময়ে ১৯ হাজার ৫০০ খুঁটি থেকে চার হাজার টাকা করে সাত কোটি ৮০ লাখ টাকা উত্তোলন করা হয়েছে।
যার বিরুদ্ধে কথিত এই অভিযোগ, তিনি হলেন তৎকালীন সংসদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের দীর্ঘ সময়ের সভাপতি মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। এই রাজনীতিক কাপাসিয়া প্রেসক্লাবেরও দীর্ঘকালের সভাপতি। যদিও তিনি দুই যুগ আগে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়েছেন।
মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ অভিযোগকে মিথ্যা ও ষড়যন্ত্র আখ্যায়িত করে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেছেন। খোদ জিএমও তার সই নকল করা হয়েছে বলে থানায় সাধারণ ডাইরি করেছেন।
আর সংসদ সদস্য সিমিন হোসেন রিমি বলেছেন, চিঠিটি তার বরাবর লেখা হলেও তিনি সরাসরি পাননি। ফেসবুকে পেয়ে ফোন করলে জিএম অস্বীকার করেন।
আমরা ধরে নিচ্ছি, মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ এ ধরনের অপকর্মের সাথে জড়িত নন। কিন্তু এটাও সত্য যে বিনামূল্যের বিদ্যুতে গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রকাশ্যে চাঁদা উঠানো হয়েছে, আর তা দলীয় ব্যানারে। যাতে এলাকারই কিছু নেতা নেতৃত্ব দিয়েছেন। সুতরাং টাকা কারও না কারও পকেটে গেছে।
এই চাঁদাবাজি বিচ্ছিন্নভাবে নয়, উপজেলার রায়েদ, তরগাঁও, সিংহশ্রী, টোক, বারিষাব ও কড়িহাতা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় পরিকল্পিতভাবে হয়েছে। খুঁটিপ্রতি নয়, টাকা উঠেছে মিটারপ্রতি।
প্রশ্ন হচ্ছে, এত বড় ঘটনা কী দায়িত্বশীলরা জানতেন না? জনকল্যাণে যাদের তৎপর থাকার কথা, তারা নীরব থাকলেন কেন?
চাঁদাবাজদের থাবা থেকে সাংসদ রিমির নিজ ইউনিয়ন রায়েদও রক্ষা পায়নি। যতদূর জানি, হাইলজোরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সরকারি কলেজ মাঠে ও সিংহশ্রীর বড়িবাড়ী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় মাঠে পৃথক অনুষ্ঠানে এমপির কাছে কিছু দলীয় নেতা-কর্মী ও ভুক্তভোগী অভিযোগ করেছিলেন।
এমপি যদি তখনই গুরুত্ব দিতেন, তাহলে হয়তো আজ বিব্রতকর প্রশ্নের সৃষ্টি হত না। জনসাধারণ উপকৃত হত।
এখন একটা অভিযোগ যেহেতু উঠেছে, উড়োচিঠি হলেও এর সুষ্ঠু ও বিশ্বাসযোগ্য তদন্ত হওয়া দরকার। মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর বিরুদ্ধে যদি অভিযোগের কোন সত্যতা না মেলে, তাহলে অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
একই সাথে এই ফৌজদারি অপরাধের সাথে জড়িতদেরও চিহ্নিত করা জরুরি। এতে করে মানুষ সত্য জানতে পারবে, ভুল বোঝাবুঝির অবসান হবে।
সরকারের মহৎ কর্মযজ্ঞে যখন কিছু লোভের জিহ্বা ধান্ধা-ফিকিরে মত্ত হয়, তখনই প্রশ্ন ওঠে। ষড়যন্ত্র বা গুজব বলে এড়িয়ে যাওয়া কল্যাণকর কিছু নয়।
চারদিকে যে সমালোচনা ও ক্ষোভের ঝড় বইছে, দলীয় ও প্রশাসনিকভাবে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করলেই পরিস্থিতির উত্তরণ সম্ভব। এতে উজ্জ্বল হবে ভাবমূর্তি।
এমপি রিমি শুধু একজন আইন প্রণেতা নন, তিনি জাতীয় বীর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদের কন্যা। তাই কাপাসিয়াবাসী তাদের কাছে অনেক কিছু প্রত্যাশা করে।
অতএব, ব্যক্তির চেয়ে দল বড়, দলের চেয়ে দেশ বড়-এই মূলমন্ত্র জেগে উঠুক। কিছু লুটেরার জন্য জনগণের বৃহৎ স্বার্থ ভূলুণ্ঠিত না হোক, এটাই বিবেকের দাবি।
রুবেল সরকার : সম্পাদক ও প্রকাশক, আলোকিত নিউজ।
আরও পড়ুন : কাপাসিয়ায় বিদ্যু সংযোগে চাঁদাবাজি, আ.লীগ নেতা বললেন ‘ষড়যন্ত্র’