গাজীপুরে ‘বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য’ থেকে গাছ পাচারের তাণ্ডব
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য এলাকায় গজারি বনের গাছ কেটে পাচার করা হচ্ছে।
ভাওয়াল রেঞ্জের বিকেবাড়ি বিটের বিশিয়া কুড়িবাড়ী মৌজায় এ তাণ্ডব চলছে।
সরেজমিনে জানা যায়, ডগরী রোডের উত্তরে জসিম পোলট্রির পূর্ব পাশে ডগরী সিটপাড়া এলাকার মাজহারুল ইসলাম ওরফে মাজুর জোত গজারি বন। সিএস ৮৮৫ নং দাগের এই বনের উত্তর পাশ ঘেঁষে সংরক্ষিত বন।
গত মাসের শেষ দিকে জোত বনের প্রায় ১৫০টি গাছ অবৈধভাবে কাটা হয়। পরে সংরক্ষিত বন থেকে প্রায় ১০০ গজারি গাছ কেটে পাচার করা হয়। আধা কিলোমিটার বনজুড়ে করাত দিয়ে কাটা মোথার ছড়াছড়ি।
খবর পেয়ে বিট অফিস জোত বনের কিছু গাছ জব্দ করে। এ ঘটনায় মাজু ও খোরশেদ আলমসহ তিনজনের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়।
বিট অফিস সিল দিয়ে সংরক্ষিত বন থেকে কেটে নেওয়া ৭৮টি গাছের মোথা চিহ্নিত করেছে। তবে এর বাইরেও সদ্য কাটা বেশ কিছু ছোট-বড় মোথা দেখা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, জোত ও সংরক্ষিত বনের ওই স্থান ‘কোর জোনে’ পড়েছে। বনটি কাটার আগে ডিমারকেশন করা হয়নি। নেওয়া হয়নি পারমিট।
গাছ কাটার আগে মাজু গং রেঞ্জ অফিসে যোগাযোগ করে। পরে নির্দেশ পেয়ে বিট অফিস সাধারণ মাপজোখ করে। গাছ কাটা শুরু হলে কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলও পরিদর্শন করেন।
মাজু গং জোতের গাছ কাটা শেষ হলে সংরক্ষিত বনে নজর দেয়। তারা বেছে বেছে বড় বড় গাছ কেটে পাচার করেন। কয়েক দিন ধরে এসব চললেও বন কর্মকর্তাদের কোন নজরদারি না থাকায় বনজ সম্পদের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, মাজহারুল ইসলাম তার জমি বিক্রির উদ্দেশে গাছ কেটে চালাভূমি করেছেন। ডিমারকেশন ও পারমিট প্রক্রিয়া সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল ভেবে তিনি রেঞ্জ অফিসকে হাত করে গাছগুলো কেটেছেন। এতে ঘুষ বেশি লাগায় পুষিয়ে নিতে সংরক্ষিত বনের গাছ কাটা হয়েছে।
এ ব্যাপারে রেঞ্জ কর্মকর্তা মাসুদ রানার সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) কাজল তালুকদার আলোকিত নিউজকে বলেন, গাছ কাটার ঘটনায় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। বিট অফিসের কোন অবহেলা নেই।
পারমিট ছাড়া গাছ কাটার সুযোগ আছে কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, পারমিট ছাড়া তো কাটার সুযোগ নেই। এখন যদি আপনার বাড়িতে গাছ কাটেন, আমি কী কিছু করতে পারব। যখন গাছ বের করবেন, তখনই আমরা আপনাকে ধরব, এটা হল আইন।
বন বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, পারমিট ছাড়া জোত বনের গাছ কাটা ও পরিবহন করা দণ্ডনীয় অপরাধ। কোর জোনের মত স্থানে এই অপরাধ সংঘটনে যারা সহযোগিতা করেছেন, সংরক্ষিত বন রক্ষায় চরম দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন, তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।