গাজীপুরে ডিমারকেশন ছাড়াই ফাউন্ডেশন বাড়ি-মার্কেট, বন বিনাশ
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে ডিমারকেশন ছাড়াই সংরক্ষিত বনের ক্ষয়ক্ষতি করে ফাউন্ডেশন বাড়ি ও দোকানপাট নির্মাণ করা হচ্ছে।
বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চলের অধীন ভাওয়াল রেঞ্জের রাজেন্দ্রপুর পশ্চিম বিটে এসব কর্মকাণ্ড চলছে।
সরেজমিনে জানা যায়, রাজেন্দ্রপুর কান্টনমেন্ট এলাকার পল্লী বিদ্যুৎ অফিসের পূর্ব পাশে নয়নপুর এলাকায় ডক্টর ভিলা নামে একটি পাঁচ তলা বাড়ি নির্মাণ করেছেন ডা. নূরুল ইসলাম শেখ। তার বাড়ির সামনে অন্তত তিন শতাংশ বনভূমি দখল করা হয়েছে।
বাড়িটির পশ্চিম পাশে তিনি জমি কিনে প্লট আকারে বিক্রির প্রক্রিয়া করছেন। এই প্রজেক্টে বন ব্যতীত নির্মাণ সামগ্রী পরিবহনের রাস্তা নেই। তাই রাস্তার জন্য ধীরে ধীরে গজারি গাছ কাটা হচ্ছে। চলতি বছরে করাত দিয়ে কর্তনকৃত চারটি গাছের মোথা দেখা গেছে।
ডা. নূরুল ইসলামের দখলকৃত ও দখলের ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে বনায়ন করা হচ্ছে না। তার জন্য বিট অফিস বেশ উদারতা দেখাচ্ছে।
ডক্টর ভিলার পূর্ব পাশে ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করছেন মোক্তার হোসেন। আশপাশে বনভূমি থাকলেও যৌথ ডিমারকেশন করা হয়নি। ইট, বালু ও খোয়া আকাশমনি বাগানের ভেতরে স্তূপ করে রাখা হয়েছে। এতে প্রায় পাঁচ শতাংশ বাগানের ক্ষতি হচ্ছে।
ওই স্থানে চলাচলের রাস্তাও বাগানের ভেতর দিয়ে তৈরি করা হয়েছে। রাস্তাটিতে ইটের সলিংও করা হয়েছিল। গত ৭ ফেব্রুয়ারি বিট অফিস ইটগুলো তুলে ফেলে।
বরই বাগান নামক স্থানে পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করছেন হারুন। তারও ডিমারকেশন নেই। নির্মাণ সামগ্রী রাখায় বনের ক্ষতি হচ্ছে।
কচি-কাঁচা একডেমির পশ্চিমে মিলন মার্কেটের উত্তর পাশে বন ঘেঁষে বালু ভরাট করে ছয়টি দোকান নির্মাণ করছেন সোহাগ। বিট অফিস ডিমারকেশন ছাড়াই তাকে কাজের অনুমতি দিয়েছে।
বিট অফিসের উত্তরে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাড়কের পাশে নির্মাণাধীন ফায়ার সার্ভিস স্টেশনের পূর্ব দিকে ২৪ রুমের বাড়ি নির্মাণ করছেন ঠিকাদার সোহেল। ওই স্থানে বন ব্যতীত চলাচলের রাস্তা ও তার ডিমারকেশন নেই। বনের ভেতরে নির্মাণ সামগ্রী রাখায় গাছপালার ক্ষতি হচ্ছে।
হোতাপাড়া পুলিশ ফাঁড়ির দক্ষিণ দিকে শামীমের বাড়ির পূর্ব পাশে পাঁচ তলা ফাউন্ডেশন দিয়ে বাড়ি নির্মাণ করছেন টাইলস ব্যবসায়ী মামুন। সেখানে বন ব্যতীত চলাচলের রাস্তা নেই। নির্মাণ সামগ্রী ও মাটি রাখায় বনের ক্ষতি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, বিট অফিস এভাবে স্থাপনাগুলো নির্মাণের সুযোগ দিয়ে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। ডিমারকেশন ছাড়া বাড়ি নির্মাণ ও বনে মালামাল রাখলে আলাদাভাবে টাকা দিতে হয়। বিট অফিস যৌথ মাপজোখ ছাড়াই এফডি লেখা খুঁটি স্থাপন করে দিচ্ছে।
স্থানীয়রা জানান, বনের সাথে সমস্যা থাকলে ঘুষ ছাড়া ডিমারকেশন ও বাড়ির কাজ করা যায় না। সমস্যা বেশি থাকলে বাড়িপ্রতি দুই-তিন লাখ টাকা লেনদেন হয়। এটা ওপেন সিক্রেট।
বিট অফিস সূত্র জানায়, বনপ্রহরীদের মধ্যে জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট মাকসুদুর রহমান অফিসের সঙ্গে কিছু ডিমারকেশনের চুক্তি করিয়ে বাড়তি সুবিধা নিচ্ছেন। বারুইপাড়া বিটে থাকাকালীন সময় থেকেই তিনি বেপরোয়া। একই সার্কেলে দীর্ঘদিন ধরে থাকায় তার দাপট বাড়ছে।
এ ব্যাপারে রাজেন্দ্রপুর পশ্চিম ও বিকেবাড়ি বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা বনপ্রহরী কামরুজ্জামান মোল্লা আলোকিত নিউজকে বলেন, তার বিটে বড় কোন কাজ হয় না। যা হয় ছোটখাট।
ডা. নূরুল ইসলামের প্রজেক্টের সামনে গাছ কাটা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তার সময়ে কোন গাছ কাটা হয়নি। এগুলো অনেক আগে কাটা হয়েছে।