গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ অফিসের পাশে বন দখল করে বাণিজ্য!

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ অফিসের পাশে বনভূমি দখল করে ব্যবসা-বাণিজ্য জমে উঠেছে।

ঢাকা বন বিভাগের অধীন এই গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দীর্ঘদিন ধরে এসব চললেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

সরেজমিনে দেখা যায়, রেঞ্জ অফিসের দক্ষিণ পাশের গেট সংলগ্ন একটি বড় পুকুর। পুকুরটি একসনা ইজারা দিয়েছে বন বিভাগ। পুকুরের পূর্ব পাশে সিএস ১৭৭ নং দাগের বনভূমি দখল করে বাসা-বাড়ি ও দোকানপাট গড়ে উঠেছে।

প্রথমে রয়েছে স্থানীয় রিয়াজ উদ্দিনের দুটি টিনশেড বাড়ি। বাড়ি দুটি ভাড়া দেওয়া। তার দখলীয় বনভূমির পরিমাণ প্রায় চার গন্ডা।

রিয়াজের বাড়ির পূর্ব পাশে শরাফত আলীর দুটি বাড়ি। খুঁটি পুঁতে টিনের বেড়ার ভেতরে দখলীয় বনভূমি অন্তত আধা বিঘা। বারান্দাসহ তিন রুমের পাকা বাড়িতে তিনি পরিবার নিয়ে থাকেন।

টিনের বেড়ার ভেতরে শরাফতের বাড়ি

অপর বাড়ি টিনশেড। সেটি ভাড়া দেওয়া। বাকি খালি জায়গার কিছু কিছু অংশে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ রোপণ করা হয়েছে।

শরাফত পেশায় মাটি ও কাঠের ব্যবসায়ী। বাড়ির দক্ষিণ পাশের বনভূমিতে মাটি এনে স্তূপ করে রাখা হয়। আর কাঠ রাখা হয় ফাউগান রাস্তা সংলগ্ন বনভূমিতে।

স্থানীয়রা জানান, শরাফতের পাকা বাড়ি দেড় বছর আগে নির্মাণ করা হয়েছে। টিনশেড বাড়িটি করা হয়েছে ছয়-সাত মাস আগে। খালি জায়গায় ধীরে ধীরে ঘর উঠানো হবে।

এ ছাড়া শরাফতের কাঠের দোকানের সাথে স্যানিটারি ওয়ার্কশপ করেছেন তার খালু নিয়াজ চাঁন। এসবের প্রভাবে কয়েক শতাংশ বনের ক্ষতি হয়েছে। ব্যাহত হচ্ছে গাছপালার স্বাভাবিক পরিবেশ।

এদিকে রিয়াজের বাড়ি সংলগ্ন স্থানের বনভূমিতে তিনি একটি টিনশেড দোকান ভাড়া দেন। ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের দোকানটিতে বসানো হয় ধান-চাল ভাঙানোর মেশিন।

ইতিপূর্বে মেশিনপত্র বিক্রি হলে রিয়াজের সঙ্গে ক্রেতার বিরোধ বাধে। পরে বিট কর্মকর্তাকে দিয়ে দুটি মটরসহ মেশিনপত্র খুলে বিট অফিসে নেওয়া হয়। রিয়াজ জমির মালিকানা দাবি করে নিষেধাজ্ঞার জন্য আদালতে একটি মামলাও করেন।

এ ছাড়া রিয়াজের মেয়ের জামাই শাহিন গত ডিসেম্বরে রাজেন্দ্রপুর বাজার মসজিদের পাশে বনভূমি দখল করে তিনটি পাকা দোকান নির্মাণ করেছেন। দুটি দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছে। একটিতে তিনি মুদি ব্যবসা করছেন।

বনভূমি দখল করে শাহিনের দোকান

ওয়াকিবহাল সূত্র জানায়, বিট অফিসের সঙ্গে লেনদেন ছাড়া বনের জমিতে স্থাপনা ওঠে না। অনুমতি ছাড়া কেউ কিছু করলে দ্রুত ভেঙে মামলা দেওয়া হয়।

সূত্র আরও জানায়, রেঞ্জ অফিসের পাশে বর্তমানে জমির বিঘাপ্রতি বাজারমূল্য দেড় কোটি টাকা। সে হিসাবে শরাফতের দখলীয় জমির মূল্য দাঁড়ায় পৌনে এক কোটি টাকা ও রিয়াজের দখলীয় জমির মূল্য প্রায় ৩০ লাখ টাকা।

এ ব্যাপারে কথা বলতে রিয়াজ উদ্দিনকে পাওয়া যায়নি। শরাফত আলী আলোকিত নিউজের কাছে দাবি করেন, তিনি বনের জমি দখল করেননি। সব তার জোত।

বিষয়টি নিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি রেঞ্জ কর্মকর্তা সৈয়দ আমিনুর রহমানের সঙ্গে কথা হয়। তখন তিনি অভিযান চালানো হবে বলে জানান।

পরদিন সকালে রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিট কর্মকর্তা আইয়ুব খান বনরক্ষীদের নিয়ে ঘটনাস্থলে যান। তারা বন্ধ রাইস মিলের কয়েকটি টিন খুলে ও খুঁটি তুলে নিয়ে যান। কিন্তু বড় স্থাপনাগুলোর কিছুই করা হয়নি।

এলাকাবাসী বলছেন, রেঞ্জ ও বিট অফিসের আশপাশে যদি দখলযজ্ঞের এই অবস্থা হয়, তাহলে দূরের বনভূমি রক্ষা হবে কীভাবে? ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।

অপরদিকে একই বিটের ধলাদিয়া এলাকার মোজা ফ্যাক্টরি রোডের পশ্চিম পাশে সিএস ৯৭ নং দাগের বনভূমিতে পাঁচ রুমের টিনশেড বাড়ি নির্মাণ করছেন পচু ড্রাইভার।

বিট অফিস প্রথমে বাধা দিলেও এখন কাজ প্রায় শেষ। এতে এক লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে প্রচার রয়েছে।

আরও পড়ুন : গাজীপুরের ধলাদিয়ায় কোটি টাকার বনভূমি দখল করে মার্কেট!

আরও খবর