গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসে এডির নেতৃত্বে ঘুষ বাণিজ্য চলছেই
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুর আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে রমরমা ঘুষ বাণিজ্য চলছেই।
বিষয়টির ওপর গত ৭ নভেম্বর আলোকিত নিউজ ডটকমে একটি তথ্যবহুল প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পরও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।
সুযোগ পেয়ে সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ আনিসুর রহমান আরও বেপরোয়া হয়ে উঠেছেন।
ফলে সেবাপ্রার্থী জনসাধারণের হয়রানি ও ভোগান্তি অব্যাহত রয়েছে।
সরেজমিনে প্রাপ্ত তথ্যমতে, গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসে কয়েক মাস ধরে ব্যাপক ভিড় হচ্ছে। বিদেশ যেতে ইচ্ছুক তরুণ ও যুবকরা সকাল থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে আবেদন জমা ও ফিঙ্গার প্রিন্ট দিচ্ছেন।
পাসপোর্ট অফিসকে ঘিরে রয়েছে দালাল চক্র। অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা দীর্ঘদিন ধরে দালালদের সাথে মিলেমিশে বাণিজ্য করছেন।
পাসপোর্ট অফিসের নিচ তলায় আবেদন জমা দেওয়ার কাউন্টার। সেবাপ্রার্থীরা সেখানে আবেদন জমা দিতে গেলে নানা ভুল-ত্রুটি ধরে ফেরত দেওয়া হয়।
পরে আবেদনকারীরা বাইরে অবস্থানরত দালালদের কাছে যান। তাদের দাবিকৃত টাকা দিলেই আবেদনে বিশেষ সংকেত দেওয়া হয়। তখন দায়িত্বপ্রাপ্তরা হাসিমুখে আবেদন গ্রহণ করেন।
ট্যাংকির পাড় মোড়ের টেন্যান্সি ভবন থেকে পাসপোর্ট অফিস পর্যন্ত রাস্তার দুই পাশে বেশ কিছু কম্পিউটারের দোকান রয়েছে। বেশির ভাগ দোকান দালালদের একেকটি চেম্বার।
পাসপোর্ট অফিসে ঘুষের বিভিন্ন রেট রয়েছে। নতুন বা নবায়ন সংক্রান্ত সাধারণ আবেদনে এক হাজার টাকা, জন্ম তারিখ পরিবর্তনের আবেদনে ছয় হাজার টাকা ও জন্ম নিবন্ধন দিয়ে ১৮ বছরের কম বয়সীদের আবেদনে দুই হাজার টাকা করে দিতে হয়। দালালরা অফিস সময় শেষে কর্মচারীদের হাতে টাকা বুঝিয়ে দেন।
গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসে কয়েক মাস ধরে দৈনিক গড়ে ৫০০-৭০০ আবেদন জমা হচ্ছে। ব্যক্তি বিশেষের কিছু আবেদন বিনা ঘুষে নেওয়া হয়। বাকিগুলো থেকে দৈনিক কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা হিসাবে মাসে আদায়কৃত ঘুষের পরিমাণ দাঁড়ায় এক কোটি ১০ লাখ টাকা। পদ অনুযায়ী তা ভাগ-বাটোয়ারা হয়।
একজন অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর ক্যাশিয়ারের দায়িত্ব পালন করছেন। তিনি মাঝে-মধ্যে অফিসের ভেতরে দালালদের নিয়ে বৈঠকও করেন।
সেবাপ্রার্থীরা বলছেন, পাসপোর্ট অফিসে দালাল ছাড়া কাজ হয় না-এটা ওপেন সিক্রেট। দালাল ধরতে বাধ্য করার কারণে অতিরিক্ত টাকা খরচ হচ্ছে।
গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসের সহকারী পরিচালক আনিসুর রহমান গত ২৪ মার্চ যোগদান করেছেন। তার দায়িত্বের প্রায় আট মাসে কয়েক কোটি টাকার বাণিজ্য হয়েছে।
বাণিজ্য ধামাচাপার পাঁয়তারা : আলোকিত নিউজে ‘গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য, কর্তৃপক্ষ নীরব’ শিরোনামে প্রতিবেদন প্রকাশিত হওয়ার পর চলে ব্যাপক তোলপাড়। পরে বাণিজ্য ধামাচাপা দিতে শুরু হয় নানা তৎপরতা।
এরই মধ্যে দুজন সাংবাদিক তাদের পক্ষে লেখার জন্য ওই অফিস সহকারীর সাথে যোগাযোগ করেন। তিনি এডির সাথে কথা বলে কীভাবে লিখতে হবে তাদের বুঝিয়ে দেন।
পরে ভোরের আলোসহ কয়েকটি পত্রিকার প্রথম পৃষ্ঠায় বড় হেডলাইন দিয়ে ওই সংবাদ ছাপা হয়। তাতে এডির বক্তব্য উল্লেখ করে বলা হয়, আনিসুর রহমানের বিচক্ষণতায় পাসপোর্ট অফিসে কোন দালাল নেই। আবেদনকারীরা ঘুষ ও হয়রানি ছাড়াই সেবা পাচ্ছেন।
একজন কর্মচারী বলেন, এডির পক্ষে সংবাদ প্রকাশ করে পত্রিকা নিয়ে অফিস সহকারীর সাথে দেখা করলেই পাঁচ হাজার টাকা করে দেওয়া হচ্ছে। আলোকিত নিউজে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দালাল ও চামচা সাংবাদিকদের কদর বেড়েছে।
পর্যবেক্ষক মহল বলছেন, এডি যদি নিজে বাণিজ্যে জড়িত না থাকতেন, তাহলে অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নিতেন। ওই ফরমায়েশি সংবাদের মাধ্যমে বাস্তব সত্যকে চাপা দেওয়ার চেষ্টা মানে বাণিজ্য তার নেতৃত্বে হচ্ছে।
দালালদের সাথে কথা বলে জানা যায়, আলোকিত নিউজে প্রতিবেদন প্রকাশের পর পরিস্থিতি ভালো দেখানোর জন্য তাদেরকে অফিস চলাকালীন সময়ে ভেতরে ঢুকতে বারণ করা হয়েছে। তবে আগের কৌশলে আবেদন ও লেনদেন এক দিনের জন্যও বন্ধ হয়নি।
একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসে দালাল প্রতিরোধে জেলা প্রশাসন কিংবা পাসপোর্ট অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে অভিযানও চালানো হচ্ছে না। সার্বিক বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের জোরালো পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
আরও পড়ুন : গাজীপুর পাসপোর্ট অফিসে কোটি টাকার ঘুষ বাণিজ্য, কর্তৃপক্ষ নীরব