গাজীপুরে ডিবির এসআই রকিবের লুটপাট, পক্ষে সাক্ষী দিতে চাপ!

আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরে মাদক উদ্ধারের নামে বসতবাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের অভিযোগের তদন্ত চলছে।

জেলা গোয়েন্দা শাখার এসআই রকিবুল ইসলামের নেতৃত্বে সদর উপজেলার ভবানীপুর নয়াপাড়া এলাকায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঘটনাটি ঘটে।

বিষয়টির ওপর গত ২৬ অক্টোবর আলোকিত নিউজ ডটকমে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এ নিয়ে চলে ব্যাপক তোলপাড়।

পরে পুলিশ সুপার কাজী শফিকুল আলম অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) গোলাম রব্বানী শেখকে প্রধান করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেন।

সরেজমিনে প্রাপ্ত তথ্যমতে, নয়াপাড়ার মোখলেছুর রহমানের ছেলে আসাদুল ইসলাম (২৭) মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত। গত ১৪ সেপ্টেম্বর বেলা দুইটার দিকে ডিবির এসআই রকিবুল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে তার বাড়িতে অভিযান চালান।

তারা ঘরে ঢুকে আসাদুলকে না পেয়ে ড্রেসিং টেবিল ও ঘরের সিলিং ভাঙচুর করেন। কিছুক্ষণ পর বাইরে এসে চার-পাঁচ প্যাকেট ইয়াবা ট্যাবলেট পাওয়া গেছে বলে দেখান।

পরে সাক্ষী হিসেবে সাদা কাগজে বাড়ির ভাড়াটিয়া আবদুর রহিম ও তার স্ত্রী, আসাদুলের ভাবি মোসলিমা এবং প্রতিবেশী নুরুদ্দিনের স্বাক্ষর ও মাইনুদ্দিনের টিপসই নেওয়া হয়। কিন্তু এ ঘটনায় কোন মামলা করা হয়নি।

আসাদুলের পরিবার অভিযোগ করেন, ডিবি তাদের ঘরের শোকেস থেকে নগদ ৭০ হাজার টাকা, উঠান থেকে পৌনে তিন লাখ টাকা দিয়ে কেনা একটি নতুন জিক্সার মোটরসাইকেল, একটি স্মার্টফোনসহ পাঁচটি মোবাইল ও রাউটারসহ সিসি ক্যামেরা নিয়ে গেছে। তারা ভয়ে কিছু বলেননি।

ওই অভিযানের এক মাসেরও বেশি সময় পর গত ২০ অক্টোবর বেলা ১১টার দিকে আসাদুলকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা এলাকা থেকে প্রাইভেটকারে তুলে নেওয়া হয়। পরে রক্ষিতপাড়া এলাকাকে (রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তার পাশে) ঘটনাস্থল ও লুঙ্গির কোচ থেকে ৭০০ পিস ইয়াবা উদ্ধার দেখিয়ে এসআই রকিবুলের সঙ্গীয় এসআই মেহেদী হাসান বাদী হয়ে জয়দেবপুর থানায় একটি মামলা করেন।

তখন প্রশ্ন ওঠে, প্রথমবারের অভিযানে ইয়াবা উদ্ধার ও মালামাল জব্দের ঘটনায় মামলা হয়নি কেন? চার-পাঁচ প্যাকেট ইয়াবা গেল কোথায়?

এ ব্যাপারে এসআই রকিবুল ইসলাম মোটরসাইকেলটি ‘পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে’ দাবি করে অন্যান্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

এদিকে আসাদুলকে আরও দুই-তিনটি মামলা থেকে বাঁচাতে তার পরিবারের সদস্যদের ‘শেখানোমত সাক্ষী দিতে’ এসআই রকিবুল চাপ দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ১৫ ডিসেম্বর দুপুরে আসাদুলের স্ত্রী সালমার মাধ্যমে তার মা আমেনা খাতুন ও প্রত্যক্ষদর্শী ভাড়াটিয়া আয়েশাকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়। সেখানে অভিযুক্তরা ভয়ভীতি দেখানোর কারণে তারা শেখানো সাক্ষ্য দেন।

আয়েশা ও আমেনা খাতুন আলোকিত নিউজকে বলেন, তারা আসাদুলের কথা চিন্তা করে এসআই রকিবুল যেভাবে বলেছেন, সেভাবেই সাক্ষী দিয়েছেন। এসআই রকিবুল বলেছেন, আসাদুলের ভাই রাজু ও সাংবাদিক সবুজকে দেখার আছে।

রাজু অভিযোগ করেন, অভিযানের বিষয়ে আলোকিত নিউজের সাংবাদিক মেহেদী হাসান সবুজকে তথ্য দেওয়ায় তাকে নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। ফলে তিনি গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগছেন।

অপরদিকে আসাদুল গত সপ্তাহে জামিনে মুক্তি পেয়েছেন। শনিবার বিকেলে আসাদুল, তার স্ত্রী, ভাবি মোসলিমা ও ভাড়াটিয়া আয়েশাকে ডিবি কার্যালয়ে ডেকে নেওয়া হয়।

জানতে চাইলে আসাদুল ও তার স্ত্রী সালমা আলোকিত নিউজকে বলেন, দোতলার একটি রুমে বসিয়ে দুটি সাদা কাগজে ‘অভিযোগ সত্য নহে’ মর্মে তাদের স্বাক্ষর নিয়ে সিসি ক্যামেরা, রাউটার ও চারটি মোবাইল ফেরত দেওয়া হয়েছে। মোটরসাইকেল ফেরতের প্রক্রিয়া চলছে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ডিবি) নন্দিতা মালাকার আলোকিত নিউজকে বলেন, তদন্ত এখনো শেষ হয়নি। আরেকটু বাকি আছে।

আরও পড়ুন : গাজীপুরে মাদক উদ্ধারের নামে ডিবির এসআই রকিবের লুটপাট

আরও খবর