গাজীপুরে উচ্ছেদের পর বনভূমি ফের দখল, নেপথ্যে ফরেস্টার আইয়ুব!
আলোকিত প্রতিবেদক : গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ অফিসের পাশে নোয়াগাঁও মৌজার সিএস ১৭৭ নং দাগের বনভূমি দখল করে গড়ে ওঠা স্থাপনা গত ৭ ফেব্রুয়ারি উচ্ছেদ করেছিল বন বিভাগ।
বিষয়টির ওপর আলোকিত নিউজ ডটকমে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পরদিন ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অভিযান পরিচালনা করা হয়।
এ সময় রিয়াজ উদ্দিনের টিনশেড বাড়ির একাংশ, শরাফত আলীর টিনশেড বাড়ির একাংশ, তার টিনের বাউন্ডারি, কাঠের দোকান, গ্যারেজ ও নিয়াজ চাঁনের স্যানিটারি ওয়ার্কশপ উচ্ছেদ করা হয়।
তখন রাজেন্দ্রপুর পূর্ব বিট অফিস জানিয়েছিল, সহকারী বন সংরক্ষক রেজাউল আলম ও শামসুন্নাহার শ্রাবণীর নেতৃত্বে অভিযানে আধা বিঘা বনভূমি উদ্ধার হয়েছে। যার স্থানীয় বাজারমূল্য পৌনে এক কোটি টাকা।
আরও পড়ুন : গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে উচ্ছেদ অভিযান, মূল্যবান বনভূমি উদ্ধার
অভিযানের কয়েক দিন পর আবার দখলের তৎপরতা শুরু করেন শরাফত আলী। বিট অফিস তাকে প্রকাশ্যে সহযোগিতা করে। এ জন্য উদ্ধারকৃত বনভূমিতে বনায়ন করা হয়নি।
গত শনিবার দুপুরে ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা যায়, শরাফত আলী আরসিসি খুঁটি পুঁতে টিনের বেড়া দিয়ে পুনরায় বনভূমি দখলে নিয়েছেন। টিনশেড বাড়ির উচ্ছেদকৃত অংশে দিয়েছেন কাঠের দোকান। তার রোপিত বিভিন্ন গাছপালাও বহাল রয়েছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ওই অভিযানে দখল কাজে ব্যবহৃত টিনগুলো অপসারণ করা হলেও জব্দ করা হয়নি। ফলে শরাফত আলী আগের টিন দিয়েই আবার দখল সম্পন্ন করেছেন।
সূত্র আরও জানায়, বিট কর্মকর্তা আইয়ুব খান শ্রীপুর রেঞ্জের সাতখামাইর বিটে বদলি হয়ে যাওয়ার আগেই শরাফত আলীর দখল সম্পন্ন হয়েছে। এ ছাড়া আইয়ুব খানের আমলেই শরাফত আলী বনভূমি দখল করে টিনশেড বাড়িটি করেছিলেন।
আঁচড় পড়েনি শাহিনের দখলে : রিয়াজ উদ্দিনের মেয়ের জামাই শাহিন গত ডিসেম্বরে রাজেন্দ্রপুর বাজার মসজিদের পাশে বনভূমি দখল করে তিনটি পাকা দোকান নির্মাণ করেছেন। দুটি দোকান ভাড়া দেওয়া হয়েছে। একটিতে তিনি মুদি ব্যবসা করছেন।
আলোকিত নিউজের প্রতিবেদনে নতুন দোকানের চিত্র তুলে ধরা হলেও সেখানে অদ্যাবধি কোন অভিযান চালানো হয়নি। এতে বাজার এলাকায় বনভূমি দখলের ঝোঁক বাড়ছে।
বনভূমিতে নির্মিত শাহিনের দোকান বহাল
সংশ্লিষ্ট একজন বলেন, শাহিন বিট কর্মকর্তা আইয়ুব খানকে হাত করেই টিনশেড থেকে দোকানগুলো পাকা করেছেন। তাতে তিন লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে বলে প্রচার রয়েছে। দোকান উচ্ছেদ করতে গেলে হয়তো ঘুষের টাকা ফেরত দিতে হবে, নয়তো বাধা আসবে-এমন আশঙ্কায় অভিযান এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
রাইস মিলে তুলকালাম : রিয়াজ উদ্দিন তার বাড়ি সংলগ্ন স্থানে ২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একটি টিনশেড দোকান করে নাসির উদ্দিনের কাছে ভাড়া দেন। নাসির মারা গেলে তার স্বজনরা ধান-চাল ভাঙানোর মেশিনপত্র তার ভাগ্নি ফারজানার কাছে বিক্রি করেন। এ নিয়ে রিয়াজ ক্ষুব্ধ হন।
ফারজানা গত বছরের জানুয়ারিতে দোকানের চালার পুরনো টিন পাল্টানোর কাজ শুরু করলে বিট কর্মকর্তা আইয়ুব খান গিয়ে বাধা দেন। তিনি এই জমি বনের দাবি করে দুটি মটরসহ মেশিনপত্র খুলে বিট অফিসে নিয়ে যান।
পরে রিয়াজ জমির মালিকানা দাবি করে নিষেধাজ্ঞার জন্য আদালতে একটি মামলা করেন। উচ্ছেদ অভিযানে দোকানের অবশিষ্ট তিন পাশের টিনের ছয়টি বেড়া, ১৬টি আরসিসি খুঁটি ও বেশ কিছু কাঠ বিট অফিসে নিয়ে যাওয়া হয়।
অভিযানের পর মাপজোখ করে সীমানা নির্ধারণ করে বিট অফিস। এতে দেখা যায়, তর্কিত দোকানের কিছু অংশ বনভূমি। বেশির ভাগ অংশ জোত।
ক্ষতিগ্রস্ত ফারজানা আলোকিত নিউজকে বলেন, বিট অফিস আমাকে কোন নোটিশ না দিয়েই রাইস মিল ভেঙে মেশিনপত্র ও মালামাল নিয়ে গেছে। প্রথমে মটর নেওয়ার পর তা ফেরত দেওয়ার কথা বলে বিট কর্মকর্তা আমার কাছ থেকে কয়েক দফায় এক লাখ ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু কিছুই ফেরত দেননি।
তিনি আরও বলেন, বিট কর্মকর্তা আমাকে বাগানের একটি প্লট দেওয়ার কথা বলে ৪০ হাজার টাকা দাবি করেন। পরে বোটম্যান আলমগীর হোসেনের মাধ্যমে ২০ হাজার টাকা দিলেও এখনো প্লট বুঝে পাইনি।
আইয়ুব খানের বক্তব্য : বিষয়টি নিয়ে সোমবার বিট কর্মকর্তা আইয়ুব খানের সঙ্গে মোবাইলে কথা হয় আলোকিত নিউজের।
শরাফত আলীর দখল প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি ফেব্রুয়ারির ২৩ তারিখে চলে গেছি। আমি থাকতে নড়তেও পারেনি। দখল হয়েছে ১০-১২ দিন আগে।
শাহিনের দোকান প্রসঙ্গে বলেন, শাহিনের দোকান পুরনো। রেঞ্জ কর্মকর্তা আবদুল মজিদের সময়ে উচ্ছেদ মামলা দেওয়া আছে।
রাইস মিল প্রসঙ্গে আইয়ুব খান বলেন, মটর অফিসে আছে। তিনি আর্থিক বিষয়ে ফারজানার সঙ্গে কথা কম বলেছেন। বাগানের জন্য টাকা নেননি।
এদিকে রেঞ্জ অফিসের দক্ষিণ পাশের পুকুরের উত্তর-পশ্চিম কোণে গত ফেব্রুয়ারিতে বনভূমি দখল করে একটি টিনশেড দোকান করেছেন ডিশ ব্যবসায়ী আরিফ। বিট অফিসের সঙ্গে যোগসাজশ থাকায় কোন সমস্যা হয়নি।
আরও পড়ুন : গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুর রেঞ্জ অফিসের পাশে বন দখল করে বাণিজ্য!