গাজীপুর বন্যপ্রাণী অঞ্চলে রেঞ্জার ও ফরেস্টার সংকট, বেড়েছে বন দখল

আলোকিত প্রতিবেদক : বন অধিদপ্তরের বন্যপ্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের গাজীপুর অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে রেঞ্জ ও বিট কর্মকর্তার সংকট চলছে।

এতে প্রশাসনিক চেইন অব কমান্ড ভেঙে পড়ার উপক্রমের পাশাপাশি বনভূমি দখল ব্যাপক হারে বেড়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণের বিশেষ উদ্যোগে ২০১২ সালে ঢাকা বন বিভাগ থেকে ওই নামে পৃথক বিভাগ গঠন করা হয়। তাতে অন্তর্ভুক্ত করা হয় দুটি রেঞ্জ ও সাতটি বিট অফিস।

এর মধ্যে ভাওয়াল রেঞ্জ বেশি দখলপ্রবণ। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি বিঘার বিঘা বনভূমি দখল করে স্থাপনা নির্মাণ করলেও কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

আরও পড়ুন : গাজীপুরে বনভূমিতে রিলায়েন্সের স্থাপনা বহাল, মামলা দিয়েই দায় শেষ!

রেঞ্জটিতে ২০১৯ সাল থেকে বিট কর্মকর্তারা রেঞ্জ কর্মকর্তার দায়িত্ব পাচ্ছেন। সাবেক বিভাগীয় বন কর্মকর্তা জহির উদ্দিন আকন তার পছন্দের বিট কর্মকর্তা খন্দকার আরিফুল ইসলামকে দায়িত্ব দিয়ে এর চর্চা শুরু করেন।

সুযোগ পেয়ে আরিফুল ইসলাম বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। নানা কৌশলে কোটি কোটি টাকার বনভূমি বেহাত করে তিনি ২০২০ সালের জুনে চট্টগ্রামে বদলি হয়ে যান।

আরও পড়ুন : গাজীপুরে দখল বাণিজ্য : ফরেস্টার আরিফ ধরাছোঁয়ার বাইরে

তার দুর্নীতি নিয়ে তখন আলোকিত নিউজ ডটকমে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তদন্ত হলেও শেষে তা ধামাচাপা দেওয়া হয়।

আরিফুল ইসলামের বদলির পর রেঞ্জটির দায়িত্ব পান ডিপ্লোমা ফরেস্টার মাসুদ রানা। তিনি প্রায় তিন বছর ধরে রেঞ্জ চালাচ্ছেন।

আরও পড়ুন : গাজীপুরে বন দখল ও বিনাশ : বারবার বেঁচে যাচ্ছে মাদবর এগ্রো

বর্তমানে ভাওয়াল রেঞ্জের চারটি বিট অফিসের মধ্যে শুধু বারুইপাড়া বিটে বিট কর্মকর্তা আছেন। সেখানকার বিট কর্মকর্তা আবুল কালাম সামসুদ্দিন গত জানুয়ারি থেকে দ্বিতীয়বারের মত রেঞ্জের মধ্যে সবচেয়ে বড় ভবানীপুর বিটের চলতি দায়িত্ব পেয়েছেন।

আরও পড়ুন : গাজীপুরের ভবানীপুর বিটে বনভূমি দখলের হিড়িক, বাণিজ্য রমরমা

বিকেবাড়ি ও রাজেন্দ্রপুর পশ্চিম বিটের দায়িত্বে আছেন বনপ্রহরী কামরুজ্জামান মোল্লা। বিট কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান ২০২১ সালের জুনে অবসরে যাওয়ার পর তিনি এক সঙ্গে দুটি বিটের দায়িত্ব পান।

তখনকার বিভাগীয় বন কর্মকর্তা কাজল তালুকদার বিট দুটিতে কোন বিট কর্মকর্তাকে দায়িত্ব না দিয়ে স্থানীয় ব্যবস্থাপনায় দায়িত্ব পালনের চিঠি দেন। এরপর কামরুজ্জামান মোল্লা দায়িত্বে বসেন।

আরও পড়ুন : গাজীপুরে ডিমারকেশন ছাড়াই ফাউন্ডেশন বাড়ি-মার্কেট, বন বিনাশ

এর আগে বারুইপাড়া বিটের দায়িত্বে ছিলেন বনপ্রহরী হোসেন আহমেদ। তখন তার ডিমারকেশন বাণিজ্য নিয়ে আলোকিত নিউজে সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশের পর দৌরাত্ম্য কমেছিল।

এদিকে জাতীয় উদ্যান রেঞ্জ কর্মকর্তা কাজী নাজমুল হকের বদলির সময় হয়েছে। সেখানে পোস্টিং নিতে বিট কর্মকর্তা পদের একজন দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছেন।

রেঞ্জটির বাউপাড়া বিট কর্মকর্তা মোনায়েম হোসেনকে গত ৮ মে চট্টগ্রামে বদলির নির্দেশ দিয়েছেন প্রধান বন সংরক্ষক (সিসিএফ) আমীর হোসাইন চৌধুরী। তবে তাকে এখনো রিলিজ করা হয়নি। বড় এই বিটে পোস্টিং নিতেও একাধিক কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট মহলে তদবির করছেন।

একজন বন কর্মকর্তা বলেন, গাজীপুর বন্যপ্রাণী ও প্রকৃতি সংরক্ষণ অঞ্চল বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। এখানে যোগ্য ও সার্ভিস রেকর্ড দেখে ভালো কর্মকর্তাদের পোস্টিং দেওয়া উচিত।

আরও পড়ুন : গাজীপুরে ৮ কোটি টাকার বনভূমিতে প্যারামাউন্টের স্থাপনা নির্মাণ চলছেই

তিনি বলেন, বিট কর্মকর্তা রেঞ্জের ও বনপ্রহরী বিটের দায়িত্বে থাকলে চেইন অব কমান্ড রক্ষা হয় না। একই পদমর্যাদার থাকায় বিট কর্মকর্তারা স্বাভাবিকভাবেই রেঞ্জ কর্মকর্তাদের সমীহ করতে চান না। আবার রেঞ্জ কর্মকর্তারা অসৎ উদ্দেশ্য পূরণ করতে চাইলে বনপ্রহরীরা ভয়ে নীরব থাকেন। এই সুযোগে দুর্নীতি বেড়ে যায়।

ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, বিট কর্মকর্তার সংকট থাকলে একজন বনপ্রহরীকে একটি বিটের দায়িত্ব দেওয়া যায়। কিন্তু এক সঙ্গে দুটি বিটের দায়িত্ব দিলে তার পক্ষে কাজের চাপ সামলানো কঠিন হয়ে পড়ে।

আরও পড়ুন : গাজীপুরে ‘বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য’ থেকে গাছ পাচারের তাণ্ডব

উল্লেখ্য, ২০১৯ ও ২০২০ সালে পার্ক বিট কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন বনপ্রহরী মাহমুদার রহমান। দায়িত্ব পেয়েই তিনি পার্ক থেকে আকাশমনি গাছ, পাম্প হাউজের ডিপ মেশিন, কোয়ার্টারের চালার টিন ও কাঠ পাচারে জড়িয়ে পড়েন।

এসব কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোকিত নিউজে একাধিক সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। পরে ডিএফও কাজল তালুকদার তদন্তের নামে তা ধামাচাপা দেন।

দুটি রেঞ্জের একাধিক সূত্র জানায়, যেসব কর্মকর্তারা পোস্টিং ও বদলির আদেশ বাতিলের জন্য তদবির করছেন, তারা মোটা অঙ্কের টাকা নিয়ে দৌড়াচ্ছেন বলে শোনা যাচ্ছে। তাদের মধ্যে কেউ মন্ত্রীর ছেলের, কেউ সিসিএফের, কেউ মন্ত্রণালয়ের ও কেউবা ডিএফওর কেরানির নাম ভাঙিয়ে দাপট দেখাচ্ছেন।

এ ব্যাপারে বন সংরক্ষক (সিএফ) ইমরান আহমেদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি।

আরও খবর